রান্নার প্রতি স্তরে সতর্ক ও যত্নবান হলে ভাল খাবার তৈরি করা যায়। ভাল খাবার তৈরির জন্য অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা প্রয়োজন। খাদ্য প্রস্তুতের কতগুলি কলাকৌশল আয়ত্ত করতে পারলেই দক্ষতা অর্জন করা যায়। রান্নার জন্য যেমন ভাল সরস উপকরণ চাই তেমনি সেগুলো কিভাবে ধুয়ে, কেটে, মিশিয়ে রান্না করতে হবে তাও ঠিকমত জানা চাই। খাদ্য নানাভাব কেটে মিশিয়ে উনুনে রান্না করা হয়। ভর্ত্তা, ভাজি, সুক্তা, নিরামিষ, চাওমিন, চপস্যুয়ে এসব বিভিন্ন রান্নায় সবজি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাটা হয়। ভাজির জন্য ঝুরি, নিরামিষের জন্য টুকরা, আমচুরের জন্য আম ফালি করে কাটা, আবার চিকেন উইত ভেজিটেবল এই চাইনিজ রান্নার সবজি পাতলা স্লাইস করে কাটার প্রচলিত নিয়মে আমরা অভস্ত। টুকরা, ফালি, স্লাইস, ঝুরি, ছেঁচা, গুড়া, এবং বাটা ইত্যাদি কাটার কৌশল। শুধু কাটা নয় খাদ্য মিশাবার পদ্ধতিও নানা রকমের হতে পারে। নেড়ে নেড়ে মিশান, ঘুটে মিশান, ফেটান, বেটে বা চেলে মিশান ইত্যাদি মিশাবার বিভিন্ন কৌশল। গুড়া খাদ্য চেলে, নরম খাদ্য বেটি এবং তরল খাদ্য ঘুটে মিশান হয়। ডুবোতেলে ভাজার সময়ে বেসনের বা ময়দার গোলার ডুবিয়ে ভাজা, ডিমে ডুবিয়ে বিস্কুটের গুড়ায় গড়িয়ে নিয়ে ভাজার কারনে খাবার সুন্দর বাদামি রঙের হয়, মচমচে হয়। জিরা, সরিষা, পাঁচফোড়ন ইত্যাদি গরম তেলে ছেড়ে ফোড়ন দিলে খাবারের স্বাদ গন্ধ উন্নত হয়। ফুলকো লুচির ময়দায় ময়ান দেয়, মথা, লুটি বেল ও ভাজা এই চারটি কৌশলের মধ্যেই ভাল লুচি তৈরির নৈপুন্য। সুস্বাদু কালিয়া, কোরমা, বিরিয়ানী রান্নার কৃতিত্বে রয়েছে পরিমাণমতো মসলার ব্যবহার করা, কষাণ ও দমে রাখা। এ কাজগুলো বিশেষ কৌশলে দক্ষ হাতে নিপুনভাবে করতে পারলেই ভাল খাবার প্রস্তুত করা যায়। সুতরাং খাবর স্বাদে, গন্ধে, রঙে, রুপে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য রান্নার কৌশলগুলি আয়ত্ত করা দরকার।

নিচে কিছু কৌশল বর্ননা করা হল:


ফালি: লম্বায় টুকলা করা। আম, গাজর, কমড়া ফালি করে কাটা হয়।

স্লাইস: গোল, লম্বা, চারকোণা ইত্যাদি নানা আকারে পাতলা করে কাটা। পেঁয়াজ, আলু, বীট, শসা, পাউরুটি স্লাইস করে কাটা হয়।

কুরানো/ঝুরি: সাধারনত নারিকেল কুরানে হয়। সবজি কুরুনিতে বিভিন্ন সবজি ফল কুরিয়ে ঝুরি করা হয়। পাকা আনারস, পেয়ারা, আম পেপে চামচ দিয়ে কুরিয়ে তোলা যায়।

চিরা/চেরা: টুকরা না করে কিছু অংশ কেটে ফাঁকা করা। দোলমার জন্য পটল, করলা চিরে নেয়া হয়।

পোঁচ দিয়ে কাটা: ধারাল ছুরি খাদ্যবস্তুর উপর বসিয়ে হালকাভাবে সামনে ও পিছনে চালিয়ে কাটা। কাটবার সময় ছুরি দিয়ে চাপ দিলে ভাল স্লাইস হয় না। পাউরুটি, কেক পোঁচ দিয়ে কেটে স্লাইস করা যায়।

কেঁচা: খেজুর কাঁটা বা কাঁটা চামচ দিয়ে খাদ্যবস্তুতে আঘাত করা। মোরব্বার জন্য আম, আমলকি ও চালকুমড়া কেঁচা হয়।

ফেটান: জোরে এবং তারাতারি মিশান। কেক তৈরি করার সময় ডালডা ও চিনি এক সাথে ফেটতে হয়। ডিমের সাদা অংশ ফাঁপাতে হলে খুব জোরে এবং তারাতারি ফেটতে হবে।

মেরাং : ডিমের সাদা অংশ জোরে ফেটাবার পর বিটার তুললে সূচাল চূড়ার মতো হয় বা জমাট বাঁধা অবস্থায় থাকে। ছবিতে জমাট বাঁধা মেরাং এবং সূচাল চূড়া দেখা যাচ্ছে। মেকারুন লেমন পাই মেরাং দিয়ে তৈরি। মেরাং ও আইসিং সুগার দিয়ে কেকের জন্য ফ্রস্টিং তৈরি করা হয়। মেরাং তৈরি করার জন্য সবধানে ডিম ভেঙে কুসুম ও সাদা আলাদা করে নিতে হবে। সমান্য কুসুম সাদার সাথে মিশে গেলে মেরাং হবে না।

ভাঁজে মিশান: মেরাং অন্য খাদ্যের সঙ্গে ভাঁজে মিশাতে হয়। অন্য খাদ্যের উপর মেরাং ঢেলে নীচের খাদ্য ২-৩ বার উপরে তুলে ভাঁজে মিশানো হয়। ভাঁজে মিশালে মেরাং টুকরা হয়ে মিশে কিন্তু সম্পুর্ন ভাবে মিশে যায় না। সুফলে করার সময় মেরাং ভাঁজে মিশান হয়।

মেরিনেটিং : তেল সিরকা বা লেবুর রসের মিশ্রনে খাবার রান্নার আগে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখা। এরুপ মিশ্রনের নাম মেরিনেড।

ময়ান: ময়দা বা আটার সঙ্গে ঘি, ডালডা বা তেল মিশানো। লুচি, ডালপুরী, নিমকপারা তৈরির জন্য ময়দায় ময়ান দেয়া হয়।

মথা: আটা বা ময়দায় পানি মিশিয়ে হাতের তালু দিয়ে ভালভাবে মাখানো।

ছেনে নেওয়া: নরম বা তরল খাদ্য ছাঁকনি অথবা কাপড়ে নিয়ে ছাঁকা।

মচমচে: মচমচে খাবার দু আঙ্গুলের মধ্যে রেখে চাপ দিলে গুঁড়া হয়ে যায়। খাদ্য রোদে শুকিয়ে, খোলায় টেলে, বেক করে অথবা তেলে ভেজে মচমচে করা হয়। মুড়ি, টেষ্টি বিস্কুট, সমুসা পটেটো চিপস্ মচমচে খাবার।

বেরেস্তা: মিহিস্লাইস করা পেঁয়াজ তেল বা ঘিয়ে হালকা বাদামি রং করে ভেজে বাতাসে ছড়িয়ে রাখলে ঠান্ডা হওয়ার পর মচমচে হয়। এমনি ভাজা মচমচে পেঁয়াজকে বেরেস্তা বলে। বেরেস্তার রং যাতে হালকা হয় সেজন্য ভাজার সময় পেঁয়াজ সামন্য বাদামি রং ধরলেই চুলা থেকে নামিয়ে নাড়তে হবে। বেরেস্তা দিয়ে পোলাও ইত্যাদি সাজানো হয়।

ফোড়ন: মেথি. জিরা, সরিষা, পাঁচফোড়ন ইত্যাদি গরম তেলে ছাড়া।

কষান: রান্না করার সময় খাবারের পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর মৃদু আঁচে ঘন ঘন নেড়ে কিছুক্ষন রান্না করা।

তেলের উপরে উঠা: মাসং, হালুয়া কষাবার পর পানি শুকিয়ে তেল ঢেলে দিলে আমরা বলি তেলের উপরে উঠেছে।

দম: রান্না শেষে খুব মৃদৃ আঁচে ঢেকে রাখা। কোরমা, কারিয়া, রেজালা দমে রাখলে তেলের উপর উঠে। পোলাও, জরদা দমে রাখেলে ঠান্ডা হওয়ার পর ঝরঝরে হয়।

ভাপানো: ফুটন্ত পানি বা বাষ্পের মধ্যে কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নেয়া। অণুজীব ও এনজাইম নষ্ট করার জন্য বরফে জমিয়ে বা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষনের সময় খাদ্য ভাপানো হয়।

নির্বীজন করা: খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষন করার জন্য প্রয়োজনীয় ছুরি, চামচ, শিশি, বোতল ইত্যাদি ডুবো পানিতে ৩০ মিনিট ফুটিয়ে নেয়াকে নির্বীজন করা বলে। নির্বীজন করার জন্য শিশি, বোতল ডুবো পানিতে দিয়ে চুলায় দিতে হবে। পানি ফুটার বিশ মিনিট পর নামিয়ে পরিষ্কার ট্রের উপর বোতল রেখে সম্পূর্নভাবে শুকাতে হবে।

প্রক্রিয়াজাতকরণ বা প্রোসেসিং : সংরক্ষন করার জন্য খাদ্য বোতলে ভরে মুখ বন্ধ করার পর বড় হাঁড়িতে বা প্রেসারকুকারের মধ্যে পানিতে (পানি বোতলের ২ সে.মি. উপরে উঠবে) ডুবিয়ে ধীরে ধীরে কয়েক ঘন্টা ফুটিয়ে প্রোসেস করা হয়। মুখ খোলা স্কোয়াসের বোতল এবং টিনের পাত্র প্রোসেস করার সময় পাত্রের এক তৃতীয়াংশ পানির উপরে থাকে। প্রোসেস করার ফলে ব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট মোলড ইত্যাদি অনুজীব এবং এনজাইম ধ্বংস হয়ে। এতে খাদ্য অনেকদিন পর্যনত সংরক্ষন করা যায়।

বায়ুরুদ্ধ করে সীল করা: খাদ্য প্রোসেসিং এর সময় উত্তাপে বোতল বা টিনের পাত্রের জলীয় অংশ বাষ্পীভূত হয়। বাষ্পের উর্ধ্ধগতিতে ভেতরের বাতাস রয়ে যায়। ভিতরের তাপমাত্রা ৮২0 সে: হলে সব বাতাস দুরীভূত হয়। জলীয় বাষ্প সেই শূন্যস্থান দখল করে। ঠিক সেই সময় মেশিনের সাহায্যে বোতল বা পাত্রের মুখ বায়ুরুদ্ধভাবে বন্ধ করে দিলে ভিতরে বায়ু প্রবেশের সুযোগ ঘটে না। বোতল বা পাত্র ঠান্ডা হলে ভিতরে বায়ুশুন্য থাকে। এভাবে বায়ুশূন্য করে অণুজীব বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করা হয়।

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

Popular Post

Powered by Blogger.

- Copyright © BENGALI RECIPE TIPS রান্না ঘর -National Web Portal- Powered by Blogger - Designed by Nirab -